শিক্ষা সংস্কার রোডম্যাপ ৫–৭ বছরের অগ্রাধিকার (পর্ব ৩)
বাংলাদেশে শিক্ষা সংস্কারের রূপরেখায় এবার নজর নীতিগত সমাধানে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা, গবেষণা বিনিয়োগ ও অরাজনৈতিক সুশাসন। লক্ষ্য: লার্নিং পভার্টি কমিয়ে কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
Bangladesh’s education reform agenda shifts from diagnosis to solutions, targeting learning poverty, teacher quality, technical skills, research investment, and depoliticized governance. The roadmap envisions a data-driven, accountable, and innovation-led education system to build a skilled, creative, and equitable future workforce within the next decade.
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার প্রথম পর্বে বাংলাদেশের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা, সরকারের ভূমিকা এবং অত্যাধুনিক ও টেকসই উন্নয়নে করণীয় (https://theinsighta.com/p/50f) আলোচিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ফোকাস করা হয়েছে শিক্ষানীতির অসঙ্গতি, পাঠ্যক্রমে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা এবং দীর্ঘমেয়াদি ও সমন্বিত উদ্যোগের ঘাটতির মতো বিষয়গুলোর উপর (https://theinsighta.com/p/203)। আগের পর্বগুলোতে সমস্যা বিশ্লেষণকে তুলনামূলকভাবে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল; এই পর্বে আমরা সমাধানমুখী এজেন্ডাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। বিশেষ করে, আগামী ৫–৭ বছরে কী কী নীতিগত সংস্কার ও পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের “লার্নিং পভার্টি” (learning poverty) কমিয়ে একটি কার্যকর, উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থার পথে এগোনো সম্ভব, সে দিকেই আলোকপাত করা হয়েছে।
এই পর্বে প্রধানত পাঁচটি ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন, এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শাসন। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রাথমিক ধারণার পাশাপাশি বর্তমান সমস্যা, বাস্তবসম্মত সমাধান কৌশল, এবং নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবায়নের ধাপগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে।
১) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক: শেখার ভিত্তি মজবুত করা
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সুবিধার মাধ্যমে শেখার সর্বোচ্চ ফল বের করা এবং শিক্ষিত, কর্মমুখী, উদ্যোগী ও কর্মঠ যুবশ্রেণী তৈরি করা।
সমস্যা: বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরে ভর্তির হার প্রায় ৯৮%, কিন্তু শিক্ষার গুণগত মান, বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজিতে, আশঙ্কাজনকভাবে খারাপ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন (২০২২) অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৬৮% শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তর শেষ করলেও বয়স অনুপাতে “লার্নিং পভার্টি” (প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ঘাটতি) থেকে বের হতে ব্যর্থ হয়।
কৌশল:
শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন: সকল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকের জন্য বাধ্যতামূলক, পর্যায়ক্রমিক এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ চালু করা। সিঙ্গাপুরের National Institute of Education (NIE) এর আদলে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে শিক্ষক প্রশিক্ষণকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
কারিকুলাম সংস্কার: মুখস্থ-নির্ভরতা কমিয়ে ক্রিটিক্যাল থিংকিং বা সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা, কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ এবং কোলাবোরেশন বা সহযোগিতা (4Cs)-ভিত্তিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া ।
ডিজিটাল একীকরণ: “মুক্তপাঠ” এর মতো প্ল্যাটফর্মকে আরও শক্তিশালী করে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের ব্যবস্থা করা। UNESCO-এর তথ্য মতে, করোনার মহামারীর সময় ডিজিটাল বৈষম্য শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশাল ফাঁক তৈরি করেছিল।
লক্ষ্য (৩–৫ বছর):
প্রশিক্ষিত প্রাথমিক-শিক্ষকের হার ≥ ৯০% (২০২৩: ~৭৭%)
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত (TSR) ≤ ১:২৫ (২০২৩: ~১:২৭)
গ্রেড-৫ ও গ্রেড-৮ দক্ষতা-মূল্যায়নে (বাংলা/গণিত/বিজ্ঞান) ≥ ১৫ পয়েন্ট বৃদ্ধি; উপস্থিতি ≥ ৯৫%
নীতিপদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন: শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নে অত্যধিক জোর দেওয়া এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
জাতীয় শিক্ষক দক্ষতা কাঠামো (NTCF): পাঠদানের ৫টি ডোমেইনে (Subject Mastery, Pedagogy, Assessment for Learning, Inclusive Practices, EdTech) স্তরভিত্তিক (L1–L4) সার্টিফিকেশন; লাইসেন্স নবায়নকে শিক্ষক-মূল্যায়নের শর্ত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
স্কুলভিত্তিক কোচিং: প্রতি ১০–১২টি স্কুলে ১ জন মাস্টার ট্রেইনার নিয়োগ।
শেখার ডেটা ড্যাশবোর্ড: মাসিক কম্পিটেন্সি ট্র্যাকিং (দক্ষতা-ভিত্তিক অগ্রগতি/কর্মদক্ষতা পর্যবেক্ষণ) চালু করা।
২) কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা: শিল্পসংযুক্ত দক্ষতা ও চাকরি
ব্যাপকভাবে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
সমস্যা: বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৭% কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় (টিভিইটি) নিয়োজিত (ILO, 2022), অথচ অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমশক্তির চাহিদা এটির চেয়ে বেশি।
কৌশল:
শিল্প-শিক্ষা: জার্মানির ‘ডুয়াল সিস্টেম’ মডেল অনুসরণ করা। এতে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাস্তব কাজের প্রশিক্ষণ (Apprenticeship) পাবে।
আধুনিকায়ন: দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং উদীয়মান খাত-এর জন্য বিশেষায়িত TVET (টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেইনিং) ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা।
লক্ষ্য (৩–৫ বছর):
TVET-এ মোট ভর্তি ও উত্তীর্ণ উভয়ই দ্বিগুণ করা।
ট্রেড-ওয়ারি পাসের হার ≥৭০% এবং এমএসএমই-অ্যাপ্রেন্টিসশিপ ২ লক্ষ+।
নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবায়ন:
বাংলাদেশ টেকনিক্যাল এডুকেশন বোর্ড (BTEB)/ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (NSDA)-নেতৃত্বে Sector Skills Councils—RMG, লেদার, লাইট-ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি, হেলথ-টেক, রিনিউএবল-এনার্জি—শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম হালনাগাদ করা মধ্যমেয়াদে (প্রতি ২ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদে (প্রতি ৫ বছর)।
ডুয়াল-সিস্টেম অ্যাপ্রেন্টিসশিপ: প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ৬–১২ মাসের পেইড প্রোগ্রাম; কর-রিবেট/ওয়েজ-সাবসিডি।
Recognition of Prior Learning (RPL): প্রবাসফেরত/অনানুষ্ঠানিক দক্ষতাধারীদের দ্রুত সার্টিফিকেশন।
জেলা-স্কিল হাব: পাবলিক-প্রাইভেট রান “Skills Labs” (CNC, PLC, solar, EV-service, medical device QA); একীভূত Job-Matching Portal।
নারী-অংশগ্রহণ: ক্রেচ/সেফ-ট্রান্সপোর্ট, নারী-মেন্টর-নেটওয়ার্ক, নিরাপদ হোস্টেল।
৩) উচ্চশিক্ষা: গবেষণা ও কর্মসংস্থান-ভিত্তিক রূপান্তর
সমস্যা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন বণ্টন বাজার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। QS World University Rankings ২০২৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় শীর্ষ ৫০০-এ স্থান পায়নি।
কৌশল:
আসন বণ্টন কৌশল: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) যৌথভাবে প্রতি ৫ বছর পর পর দেশের manpower demand projection তৈরি করবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ পরিবর্তন ও মুল্যায়নঃ এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতি মান্ধাতার আমলের। আস্তে আস্তে শিক্ষক নিয়োগের মৌলিক যোগ্যতা পিএইচ ডি-তে রুপান্তর করতে হবে। শিক্ষার্থী দ্বারা শিক্ষকদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা শুরু করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং ও অনুদান: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য একটি অভ্যন্তরীণ র্যাঙ্কিং সিস্টেম চালু করতে হবে।
লক্ষ্য (৫ বছর):
Graduate unemployment ≤8% (২০২৪-এ বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকদের বেকারত্ব ~13.5% রিপোর্টেড)।
Co-op/ইন্টার্নশিপ-সহ ডিগ্রি ≥50% প্রোগ্রামে: Outcome-Based Education (OBE) পূর্ণ রোলআউট।
শিক্ষক-গবেষক-শিল্প রোটেশন: বছরে ≥১,০০০ ফ্যাকাল্টি-ইন্ডাস্ট্রি ফেলোশিপ।
৫০% শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রীধারী।
নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবায়ন:
আসন-আর্বিট্রেশন ফ্রেমওয়ার্ক: BANBEIS/UGC-এর জব-আউটকাম ডেটা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক সিট-পূণর্বিন্যাস (STEM, স্বাস্থ্য-টেক, এনার্জি, লজিস্টিক্স, এগ্রি-টেক, ক্রিয়েটিভ-টেক)।
কো-অপ ডিগ্রি (৩-৪-১ মডেল: ৩ সেমেস্টার ক্লাস + ৪-৮ মাস ইন্ডাস্ট্রি + ১ সেমেস্টার ক্যাপস্টোন)।
প্রোগ্রাম-অ্যাক্রেডিটেশন: শিক্ষার মানদণ্ড, এমপ্লয়েবিলিটি মেট্রিক, ফ্যাকাল্টি-স্টুডেন্ট অনুপাত নিয়মিত পূণর্মূল্যায়ন।
স্টার্টআপ-ইকোসিস্টেম: বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক প্রি-ইনকিউবেশন, IP পলিসি (স্ট্যান্ডার্ড 70/30 revenue split), প্রি-সিড গ্র্যান্ট।
৪) গবেষণা ও উদ্ভাবন: R&D-ইনভেস্টমেন্ট, অনুদান-পাইপলাইন, ও জাতীয় উদ্ভাবনী মিশন
সমস্যা: বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ০.৩% গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) ব্যয় করা হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ভালো উদাহরণ হতে পারে ভিয়েতনাম বা মালয়েশিয়া যারা R&D তে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দুইটি দেশ তুলনামূলক ভাবে অনেক ভালো করছে।
কৌশল:
বিশেষায়িত গবেষণা ইনস্টিটিউট: Molecular Biology, Drug Discovery and Development, Artificial Intelligence-এর মতো কৌশলগত ক্ষেত্রে বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা
শিল্প-বিশ্ববিদ্যালয় Collaboration: শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ড দেওয়ার জন্য Tax Incentive দেওয়া। এটি Singapore এবং South Korea-এর সাফল্যের একটি মূল চাবিকাঠি।
লক্ষ্য (৫–৭ বছর):
R&D ব্যয় GDP ব্যায়ের ০.৩% থেকে ০.৬% এ উন্নতিকরন। ১০ বছরে সেটি ১.০% করা।।
GII (Global Innovation Index) র্যাঙ্ক ১০৬ থেকে ৮০ এর নিচে আসা।
Industry-funded R&D শেয়ার >৩০% করার লক্ষ্যমাত্রা করা। প্যাটেন্ট সংখ্যা প্রতি বছর দ্বিগুণ করা; স্পিন-অফ/স্টার্টআপ ≥২০০ লক্ষ্যমাত্রা করা।
নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবায়ন:
ন্যাশনাল গ্র্যান্ড-চ্যালেঞ্জ ফান্ডঃ এই গ্র্যান্ট ফান্ডের অধীনে স্বাস্থ্য-বায়ো, খাদ্য-এগ্রি, স্মার্ট-ম্যানুফ্যাকচারিং, এনার্জি-স্টোরেজ, ডীপ-টেক এই বিষয়গুলোতে গবেষণা বৃদ্ধি এবং প্রতিটা আবিস্কার বা প্যাটেন্টে প্রনোদনা দেয়া।
Co-funding R&D ট্যাক্স-ক্রেডিট (১৫–২০%) প্রনোদনা দেয়া এবং ম্যাচ-ফান্ডিং স্কিম (প্রাইভেট ১ টাকা দিলে সরকার ১ টাকা) শুরু করা।
Research Overheads & IP Policy: গ্র্যান্টে ≥15% ওভারহেড; টেক-ট্রান্সফার অফিস (TTO) বাধ্যতামূলক।
Open-Access & Data Repos: সব পাবলিকলি-ফান্ডেড গবেষণার ডেটা-ডিপোজিট ও প্রিপ্রিন্ট সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।
ডায়াসপোরা-ফেলোশিপ: প্রবাসী বিজ্ঞানীদের 3–12 মাসের ভিজিটিং-চেয়ার, ল্যাব-সেটআপ গ্র্যান্ট ব্যবস্থা করা।
Gov-Procurement as Innovation (GPAI): সরকারি ক্রয়ে “Innovation quota” (৫–১০%)—স্থানীয় R&D-পণ্যকে অগ্রাধিকার।
৫) রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শাসন: শিক্ষাঙ্গনের অরাজনৈতিক, সুশাসিত, দায়বদ্ধ ইকোসিস্টেম তৈরি।
কৌশল:
নিরপেক্ষ প্রশাসন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়োগ ও বদলি মেধা ও জ্যেষ্ঠতা-এর ভিত্তিতে করতে হবে।
সমন্বয় ও বাস্তবায়ন
অর্থবরাদ্দ: শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৬%-এ উন্নীত করা (UNESCO-এর recommendation) এবং বরাদ্দের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত করা।
নিরীক্ষণ ও মূল্যায়ন: একটি স্বাধীন এডুকেশন রেগুলেটরি কমিশন গঠন করে সংস্কারগুলোর অগ্রগতি নিরীক্ষণ করা
লক্ষ্য (তাৎক্ষণিক–মধ্যমেয়াদি)
ক্যাম্পাস-সেফটি, নিরপেক্ষ প্রশাসন, এবং একাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব থেকে শিক্ষাঙ্গন মুক্ত রাখা।
ডেটা-স্বচ্ছতা: স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মানদণ্ড (শিক্ষকতা, শিখনফল, বাজেট, টেন্ডার, নিয়োগ) উন্মুক্ত ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শন করা।
সিভিল-সোসাইটি ও ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাডভাইজরি বোর্ড: শিক্ষাব্যবস্থায় বহুমাত্রিক অংশগ্রহণ; বার্ষিক শিক্ষা শ্বেতপত্র প্রকাশ।
নীতিগত সংস্কার
প্রচলিত ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করাঃ রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে এটি করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীন করাঃ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধীরে ধীরে ভর্তুকি কমানো এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃতপক্ষেই আর্থিক এবং কাঠামোগতভাবে স্বাধীন করা।
প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মানোন্নয়ন, গবেষণা ও উদ্ভাবনে ধারাবাহিক বিনিয়োগ, এবং অরাজনৈতিক ও জবাবদিহিমূলক একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করা: এই তিনটি স্তম্ভেই বাংলাদেশের জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্রে উত্তরণের রূপরেখা দাঁড়িয়ে আছে। এখন দরকার সময়সীমাবদ্ধ লক্ষ্য, খোলামেলা ডেটা ড্যাশবোর্ডে অগ্রগতি প্রকাশ, এবং স্বতন্ত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে ফল মাপা। নীতিমালার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিল্প ও নিয়ন্ত্রকের সমন্বিত কাজই পরিবর্তনকে টেকসই করবে। বাকিটা নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, স্বচ্ছতা এবং কঠোর জবাবদিহিতার উপর। এসব নিশ্চিত করতে পারলেই শিক্ষা হবে দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনশীল বিনিয়োগ, আর আমরা বাস্তবে দেখতে পাব দক্ষ, সৃজনশীল ও ন্যায়সঙ্গত এক ভবিষ্যৎ।
About the Author
মহব্বত আলী, পি.এইচ.ডি. বেলব্রুক ল্যাব, ম্যাডিসন, উইসকন্সিন -এ সিনিয়র সাইন্টিস্ট (।।), আর এন্ড ডি তে কর্মরত আছেন। এর পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামজিক, ও রাজনৈতিক শিক্ষা ও গবেষণার সাথে জড়িত। He can be reached at mahbbatali10@gmail.com
Disclaimer: The views expressed in this article are the author’s own and do not necessarily reflect The Insighta’s editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.



