জুলাই-উত্তর বাংলাদেশ কি তালেবানের নারীনীতি অনুসরণ করবে?
আফগানিস্তানে তালেবান ৬৮০টি বই নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা। বাংলাদেশেও বই নিষিদ্ধের ইতিহাস আছে। জুলাই-উত্তর রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের প্রভাব কি বাংলাদেশকে তালেবানের পথে নিয়ে যেতে পারে?
The Taliban’s ban on 680 books, including 140 by women, echoes Bangladesh’s own history of censorship. With Islamists gaining influence in politics, concern grows: will women’s rights, minorities, and freedom of thought face Taliban-style censorship in Bangladesh?
আফগানিস্তানে তালেবানরা ৬৮০টি বই নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে নারীদের লেখা বইও রয়েছে ১৪০টি। তাদের মতে, এই বইগুলো শরিয়া আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এর আগেও নারী শিক্ষাকে সংকুচিত করায় তারা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
বাংলাদেশেও বই নিয়ে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা নতুন নয়। তাসলিমা নাসরিনের লজ্জা বা হুমায়ুন আজাদের নারী, এই বইগুলো আগের সরকারগুলো পর্যন্ত নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আবার এমন বইও থামিয়ে দেওয়া হয়েছে যার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। কেবল ক্ষমতা ও রাজনীতির মারপ্যাঁচে সেগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল। যেমন, মতিউর রহমান রেন্টুর আমার ফাঁসি চাই, মেজর ডালিমের যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি, এবং ফাহাম আবদুস সালামের বাঙালির মেডিওক্রেসির সন্ধানে।
বই নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন নয়। প্রতি সরকারের আমলেই কোনো না কোনো লেখকের বই কাটা পড়েছে। কিন্তু তালেবানের এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ইসলামপন্থী রাজনীতির ব্যাপারে কি কোনো বার্তা বহন করে? ইসলামি দল বা জোটা ক্ষমতায় আসলে তারাও কি একই পথ বেছে নেবে?
জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ডানপন্থীদের উত্থান চোখে পড়ার মতো। আওয়ামী লীগ আমলে তারা ছিল সবচেয়ে কোনঠাসা; যেসব সুযোগ-সুবিধা একজন নাগরিকের প্রাপ্য, তার অনেক কিছু থেকে তাদের সিস্টেম্যাটিকভাবে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আবার অন্যদিকে হত্যা, ধর্ষণ ও নানা অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়েছিল। আর এসব নিপীড়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে সেই সরকার দ্বারা, যেটি নিজেকে সবচেয়ে সেক্যুলার ও লিবারেল দাবি করত এবং সেই রাজনীতিক শক্তি যারা একসময় দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদান কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল হিস্যাদার দাবিদার।
জুলাই-পরবর্তী সময়ে অন্য বড় লিবারেল দলের তৃণমূল পর্যায়ের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিও মানুষের ক্ষোভ বাড়িয়েছে। ফলত জনগণের নতুন আশা হয়ে উঠছে ইসলামপন্থী দলগুলো। যার প্রতিফলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে। এই বিজয় ইসলামপন্থীদের উত্থানকে আরও স্পষ্ট করেছে এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব থাকতে পারে।
কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নিচ্ছে নতুন দুশ্চিন্তা ও প্রশ্ন: নারীর স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের গতি-প্রকৃতি কোন্ দিকে যাবে? সংখ্যালঘুদের অন্তর্ভুক্তি কি থাকবে? ধর্মীয় অনুশাসন কি জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে? ইসলামী শরিয়া কি রাষ্ট্রীয় আইনের জায়গা নেবে? সমাজে ও সামাজিক মাধ্যমসহ নানা পরিসরে কি মোরাল পুলিশিং বাড়বে?
বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলোর দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই। তাদের রাজনৈতিক কাঠামোতেও নারী নেতৃত্ব বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্তির শক্ত প্রমাণ মেলেনা। ফলে শুধু ভিন্নমতালম্বীরাই নয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তি বা পশ্চিমা বিশ্বও কৌতূহলী। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ডান ও মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এসব প্রশ্নের জবাব দিতে কতটুকু প্রস্তুত?
বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলো একত্রিত হয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে তারা সরকারে না গেলেও বিরোধী দলে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এর মানে, ইসলামিস্টরা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এবং তাদের সামনে রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে বহু প্রশ্ন আসছে এবং ভবিষ্যতে আরও আসবে। বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মের ভূমিকা নিয়ে। যদিও জামায়াত বিভিন্ন সভা ও সেমিনারে দাবি করছে যে, তারা নারীর স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বিশ্বাসী। প্রশ্ন রয়ে যায়- কথা ও কাজ কি এক হবে? তারা তালেবান সরকারের মত মতো আচরণ করবে নাতো?
About the Author
Jamal Uddin is the Editor-in-Chief of The Insighta and lecturer in the Department of Communication at Cornell University, Ithaca, NY, USA. Former journalist from Bangladesh with research interests in media, health, and politics. He can be reached at jamalus2014@gmail.com
Disclaimer: The views expressed in this article are the author's own and do not necessarily reflect The Insighta's editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.