ডাকসু ২০২৫ ফলাফল: শিবির-সমর্থিত জোটে শিক্ষার্থীদের আস্থার নেপথ্যে
ডাকসুতে শিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জোটের জয়ে আলোচনায় নতুন প্রশ্ন: শিক্ষার্থীরা কি জুলাই'র স্মৃতি, প্রার্থীদের পরিচ্ছন্ন ইমেজ, না কি শিক্ষার্থীবান্ধব এজেন্ডা দেখে ভোট দিয়েছে? সে সূত্রের খোঁজে পোস্টটি।
DUCSU 2025 has sparked contemplations about student mandates. What influenced the election outcomes? July Uprising, candidates’ clean image, or student-centric promises? This piece samples clues and context, inviting readers to weigh signals rather than rush to conclusions.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ২০২৫-এ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থীজেটের ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনে কোনটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে? নির্বাচনের চার দিন পর (১৩ সেপ্টেম্বর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুব কায়সার এক ফেসবুক পোস্টে এ বিষয়ে কিছু বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তার মতে, এই বিজয়ের পেছনে মূল কারণ হলো, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের চেতনায় আস্থা ও বিশ্বাস, সেটিকে নিঃস্বার্থভাবে হৃদয়ে ধারণ করা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব আধুনিক বাংলাদেশপন্থী ছাত্ররাজনীতির স্বপ্ন লালন।
মাহবুব কায়সার
এবারের ডাকসু'তে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদের মধ্যে প্যানেল পরিচয়ে 'বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির' এর 'ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট' এর ২৩ জন সদস্য জয়ী হয়েছে, এটি ইতোমধ্যে সকলেই অবগত। এ বিষয়ে এখানে নতুন করে তেমন কিছু বলার নাই। অনেকে অনেক আঙ্গিকে এ বিজয়কে ব্যাখ্যা করছে। মোটাদাগে ছাত্রশিবিরের এই ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনে যে কয়েকটি কারণ বা বিষয় বিভিন্ন পর্যালোচনা বা নির্মোহ বিশ্লেষনে উঠে এসেছে, তা হলো:
বৈচিত্র্যময় ও ইনক্লুসিভ প্যানেল ঘোষণা, সাদিক কায়েমসহ প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচ্ছন্ন ইমেজ, প্যানেলজুড়ে মেধাবী ও ভালো ছাত্রের ছড়াছড়ি, সাদাসিধে জীবন যাপন, মার্জিত চলাফেলা ও এপ্রোচ, শিক্ষার্থীবান্ধব ইশতেহার ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সম্মান প্রদান বিষয়ে আস্থা অর্জন, পুরোনো গেস্টরুম তথা মাস্তানী সংস্কৃতি বন্ধের বিষয়ে ভরসা পাওয়া, মূলস্রোতের রাজনীতি থেকে বিযুক্ত থাকার তথা লেজুড়বৃত্তিক ডাকসু না করার অঙ্গীকারের প্রতি ভরসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে ভূমিকা রাখার ওয়াদা, এবং
জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি অগাধ ও সত্যিকার শ্রদ্ধা প্রদর্শনের যোগ্য প্লাটফর্ম বিবেচনা করা।
তবে, আমার বিবেচনায় এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল, বাগছাস ও অন্যান্য আরও অনেকের ইশতিহারে উপরিউক্ত পয়েন্টগুলোর অনেকগুলো পয়েন্ট কমন থাকলেও জুলাই বিপ্লবের গর্বিত অংশীদার ভোটারগণ মূলত: দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে:
কারা জুলাই বিপ্লবের শহীদদের সত্যিকার চেতনা বাস্তবায়নে সত্যিকার অর্থেই আস্থাভাজন থেকে তা নি:স্বার্থভাবে হৃদয়ে লালন করে এবং কারা বিগত অর্ধশত বর্ষের ঘৃণিত ট্যাগিং-ফ্রেমিং এর ঘুণেধরা বস্তাপচা মিথ্যের বেসাতি এবং জঘন্য রেসিজমের প্রতিভূ দাড়ি-টুপি-বোরকা-হিজাব- মাদ্রাসা, জঙ্গীবাদ তথা এক কথায় পশ্চিমা দর্শনলালিত 'ইসলামোফোবিয়া’ থেকে বেরিয়ে একটি আধুনিক, সত্যিকারের বাংলাদেশপন্থী শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতির স্বপ্ন লালন করে।
এই দুই প্রত্যাশা পূরণে শিক্ষার্থীদের মনে হয়েছে ছাত্রশিবির– প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য যে কোন প্যানেল বা প্রার্থীর চেয়ে ঢের এগিয়ে। আমার এই দাবীর পেছনে প্রধান যুক্তি হলো: ছাত্রশিবিরের প্যানেলের প্রার্থীদেরকে হারিয়ে যে পাঁচজন প্রার্থী বিশেষত সম্পাদক পদে যে তিনজন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে, (সানজিদা তন্বী, এ বি জুবায়ের ও মুসাদ্দিক) তাদের তিনজনই জিতেছে মূলত: জুলাই বিপ্লবের আইকনিক প্রার্থী হিসেবে এবং গত এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবান্ধব বিভিন্ন ইস্যুতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার কারণে।
গত এক বছরে প্রক্টরিয়াল দায়িত্বে বিভিন্ন ইস্যুতে সামনে থেকে কাজ করতে গিয়ে মুসাদ্দিক ও জুবায়েরকে বেশ সাহসী ও নেতৃত্বের ভূমিকায় দেখেছি। আর তন্বীর বিষয়টি ছিল জুলাই আইকনিক হিসেবে বিশেষ দাবীদার। আমার বিবেচনায় ঐ পদে তন্বীর মতো আইকনিক জুলাই ফেইসভ্যালু না থাকলে, সেখানেও ছাত্রশিবিরের প্রার্থীই জয়ী হতো। কেননা, ঐ পদে শিবিরের প্রার্থীর প্রতিও ভোটারদের সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা ছিলো।
অন্যদিকে, বিজিতদের মধ্যেও কয়েকজন প্রার্থী বেশ আলোচিত ছিলো। যেমন, ছাত্রদলের আবিদ ও হামীম, বাগছাসের আব্দুল কাদির, অন্য প্যানেলের উমামা ফাতিমা, বামজোটের মেঘমাল্লার বসু, স্বতন্ত্র থেকে শামীম...
আমার বিবেচনায় এ কয়েকজনের পরাজয়ের কারণ ভিন্ন ভিন্ন। যেমন, আবিদের হারার অনেক কমন কারণের মধ্যে প্রধানতম কারণ আমার কাছে মনে হয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাদিক কায়েমের অপ্রতিরোধ্য ইমেজ ও লিডারশীপ। আবদুল কাদিরের ব্যক্তিগত পরিচয় ও জুলাই ভূমিকা বেশ প্রশংসনীয়। কিন্তু শেষ দিকে এসে সে-ও গতানুগতিক শিবির-বিরোধী মিথ্যে ট্যাগিংয়ের ভ্রান্ত পন্থা অবলম্বন করে পিছিয়ে পড়ে। উমামা ও মেঘমাল্লার বাম রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাহক। বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধে মিডিয়া কাভারেজ বাগিয়ে নেয়া গেলেও জনমানসের হৃদয়ের মনিকোঠায় কখনোই তা স্থান করে নিতে পারেনি, পারার কথাও নয়। এর সাথে বসুর ভয়াবহ ভূমিকা ছিলো - খেয়ে না খেয়ে মুখস্ত আওয়ামী ন্যারেটিভের আদলে, 'তুমিও জানো, আমিও জানি,... পাকিস্তানি।’ সে এতো কিছু জানে, কিন্তু দিল্লির অনুরননে কোন স্লোগান বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম আর গিলবে না, এটা কেন জানে না!
শামীম মিডিয়ার সামনে বাকপটুতা দেখালেও তার কোন সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা দৃষ্টিগোচর হয়নি। উল্টো যেটা সামনে আসলো তা হলো, তার ফ্যাসিবাদ সংশ্লিষ্টতা। হামীমকে আমার ব্যক্তিগতভাবে দলের অন্যদের চেয়ে কিয়ৎ ভিন্ন মনে হয়েছে। ভদ্রতা ও শৃঙ্খলার অনুগামী মনে হয়েছে। তবে দলীয় প্যানেলের বাস্তবতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এস এম ফরহাদের বাগ্মিতা, যুক্তিবাদিতা ও সরব উপস্থিতি এবং প্রখর প্রত্যুৎপন্নমতিতায় তাকেও পরাজয় মেনে নিতে হলো।
অর্থাৎ, ভোটের রাজনীতিতে ব্যক্তিগত ইমেজের পাশাপাশি দলীয় আদর্শও গুরুত্বপূর্ণ। আবারও প্রমাণিত।
About the Author:
Mohammad Mahbub Quaisar is Assistant Proctor of University of Dhaka and Associate Professor of the Department of Sociology. He can be reached at mquaisar2005@du.ac.
Disclaimer: The views expressed in this article have originally been published to authors' social media handle precisely in facebook. The author communicated before publishing this article here. The comment and views are the author's own and do not necessarily reflect The Insighta's editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.