ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: সফল আয়োজন ও স্বচ্ছতার মূল কারণ
প্রশাসনিক দৃঢ়তা, ছাত্রসংগঠনের সাথে সংলাপ, প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা, কঠোর নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ—এই উপাদানগুলো ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
The DUCSU Election 2025 broke with decades of irregularity and controversy, emerging as peaceful and transparent. Administrative resolve, dialogue, tech safeguards, and high student turnout drove success– yet sustaining credibility demands regular, neutral polls ahead.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতীকী মঞ্চ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু ইতিহাসের বড় অংশে এ নির্বাচন হয়েছে অনিয়ম, পক্ষপাত ও বিতর্কের ছায়ায়। সেই প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হওয়া একটি বড় পরিবর্তন। এ সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে প্রশাসনের দৃঢ় সদিচ্ছা, ছাত্রসংগঠনগুলোর সাথে সংলাপ, প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
প্রশাসনিক সদিচ্ছা ও নীতিগত দৃঢ়তা
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে অটল ছিল। পূর্বের মতো রাজনৈতিক চাপ বা প্রশাসনিক টালবাহানা এ বছর দৃশ্যমান হয়নি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু রাখতে ও ক্যাম্পাসের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৯ সালে হয়েছিল সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন, যা ছিল অনেকটাই একপেশে ও বিতর্কিত। সে কারণে এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ করতে সচেষ্ট ছিল কর্তৃপক্ষ। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নেয়া হয় নানা ধরনের পদক্ষেপ। কড়া নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রার্থী ও ভোটারদের মানতে হয় অনেক নিয়ম-কানুন। ছিল বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধও; যেমন, ভোটকেন্দ্রে মোবাইল-ব্যাগসহ একাধিক ব্যাগ, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ, যেকোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, পানির বোতল ও তরল জাতীয় কোনো পদার্থ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা।
সংলাপ ও ঐকমত্যের সংস্কৃতি
ছাত্রসংগঠনগুলোকে আলোচনায় যুক্ত করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার অনেক বিতর্ক আগেই প্রশমিত করা হয়েছে। এতে ভোটের আগে সহিংসতার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। ডাকসু নির্বাচনের প্রায় আড়াই মাস আগে ২৬ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। ওইদিন দুই ধাপে মোট ১৮টি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। এ সময় অন্য রিটার্নিং কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছাত্রসংগঠনের নেতারা নির্বাচনী প্রস্তুতি, প্রশাসনিক সহযোগিতা, নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং ভোট গ্রহণপ্রক্রিয়া–সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দেন।
আলোচনায় ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডারে ডাকসুর নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা, যাতে পরবর্তী ডাকসু নির্বাচনও নির্দিষ্ট সময়ে হতে পারে; ডাকসু গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ও ৭(ক) ধারা পরিবর্তন করা; শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে তাঁদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা সাপেক্ষে ডাকসুর তফসিল ঘোষণা করা; ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে হওয়া এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছতা
ডিজিটাল ভোটার তালিকা, সিসিটিভি, ইলেকট্রনিক ও ম্যানুয়াল পদ্ধতির মিশ্রণ ভোটারদের আস্থা বাড়িয়েছে। বুথ ছাড়া পুরো ভোটকেন্দ্র ছিল সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। ভোট গণনাও সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে সম্পন্ন করা হয়।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ব্যবহার হয় ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রেকগনিশন) ফরমে। এতে ভোটগ্রহণ শেষে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার মধ্যেই স্বচ্ছতার সাথে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও পরবর্তীতে ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিলতা ও ফলাফল ঘোষণায় বিলম্ব হয় এবং এতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরি হয়।
ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি দেখানোর ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী, ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থী এলইডি স্ক্রিনে ভোট গণনার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। ফলে অতীতে যে ভোটকেন্দ্র দখল বিতর্ক ছিল, এবার প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার কারণে তা ঘটেনি।
ভোট গণনা ও নিরাপত্তায় প্রযুক্তির ব্যবহার : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বর্ণনা
নির্বাচনের চারদিনের মাথায় ১৩ সেপ্টেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে ডাকসুর ভোট গণনায় স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সবিস্তারে তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বলা হয়, ডাকসু এবং হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটাররা ডাকসু নির্বাচনে পাঁচটি পৃথক ব্যালট পেপার এবং প্রতিটি হলে একটি করে ব্যালট ব্যবহার করেছেন। ভোটারদের নির্বাচিত প্রার্থীর নম্বরসংবলিত বাক্সে ক্রস (x) চিহ্ন দিয়ে ভোট প্রদান করতে হয়েছে। ব্যালট স্ক্যানিং প্রক্রিয়ার জন্য একটি ভেন্ডর নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ার ভেন্ডর মোট ১৪টি ওএমআর (অপটিকাল মার্ক রিকগনিশন) মেশিন সরবরাহ করে। ভোট গণনায় দুই ধরণের ওএমআর মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে কিছু প্রতি ঘন্টায় ৪,০০০ ব্যালট এবং কিছু প্রতি ঘণ্টায় ৬,০০০ ব্যালট প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম। ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রে এসব মেশিন ব্যবহার করে ব্যালট স্ক্যান ও ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করা হয়। কিছু কেন্দ্রে উচ্চক্ষমতার মেশিন ব্যবহার করা হয় এবং অন্যত্র সমান্তরালভাবে দুটি মেশিন ব্যবহার করে স্ক্যানিং সম্পন্ন করা হয়।
স্বাধীন প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট, কঠোর প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা, বাস্তব সময় পর্যবেক্ষণ এবং বহুমাত্রিক ক্রস-ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করেছে যে, ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা প্রক্রিয়াটি ছিল স্বচ্ছ, নির্ভুল এবং ত্রুটিমুক্ত।
ভোট গ্রহণ ও ভোট গণনার সকল প্রক্রিয়ার ভিডিও ধারণ : ভোট গ্রহণ এবং ভোট গণনার প্রতিটি ধাপ ধারাবাহিকভাবে ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সমগ্র প্রক্রিয়াটি সিসিটিভি ক্যামেরা ও নির্ধারিত ভিডিওগ্রাফি দলের মাধ্যমে ধারণ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের ডিজিটাইজেশন : ভোট গণনার পর সব ফলাফল ডিজিটালি রূপান্তরিত ও সংরক্ষন করা হয়েছে। ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে প্রতিটি ব্যালট স্ক্যান করে ইলেকট্রনিক রেকর্ড তৈরি করা হয়েছে। পরে তিনটি স্বাধীনভাবে তৈরি ভোট গণনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে (ফ্যাকাল্টি, প্রোগ্রামার, ভেন্ডর) ফলাফল গণনা এবং ক্রস-ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও যাচাইযোগ্যতা নিশ্চিত করতে, সকল গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট এবং রেকর্ড ডিজিটালি আর্কাইভ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
সমস্ত মূল ওএমআর স্ক্যান রেকর্ড, যা ভোট গ্রহণের সময় তৈরি হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, ব্যালট শ্রেণীবিন্যাস, ওএমআর স্ক্যানিং ও ফলাফল যাচাই সংক্রান্ত সকল নথি ও রিপোর্ট।
ব্যবহৃত ব্যালট : ভোটগ্রহণে প্রদত্ত সকল ব্যালট সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এগুলি নির্বাচনী ফলাফলের যাচাই এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যৎ রেফারেন্সের জন্য সংরক্ষিত।
অব্যবহৃত ব্যালট : নির্বাচনী ব্যবস্থার অতিরিক্ত ব্যালট এবং অব্যবহৃত ব্যালটও সীলকৃত অবস্থায় আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে কোন ধরনের বিভ্রান্তি বা অনিয়ম না ঘটে।
সব ব্যালট নিরাপদ ও সংরক্ষিতভাবে রাখা হয়েছে, এবং শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহৃত বা যাচাইয়ের জন্য উন্মুক্ত করা যেতে পারে।
এই সমস্ত আর্কাইভ করা নথি এবং ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষিত হয়েছে এমনভাবে যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যাচাই, পুনঃপর্যালোচনা বা প্রমাণসাপেক্ষ ব্যবহার করা যায়।
ভোটারের উপস্থিতির স্বাক্ষর সংরক্ষণ: ডাকসু নির্বাচনে ভোটগ্রহণের সময় প্রতিটি ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ এবং ভোট প্রদান প্রমাণ হিসেবে ভোটারের স্বাক্ষর আর্কাইভ করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে উপস্থিতির সময় ভোটারের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয় এবং তা ভোটার উপস্থিতি রেজিস্টার-এ সংরক্ষণ করা হয়।
গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা: ভোটারের স্বাক্ষর ও উপস্থিতি সংক্রান্ত সকল রেকর্ড গোপন রাখা হয়েছে এবং শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নিরাপদভাবে সংরক্ষিত হয়েছে। ভোটারের ব্যক্তিগত তথ্য বা স্বাক্ষর শুধুমাত্র আদালতের বৈধ অনুরোধের ভিত্তিতে যাচাই বা উন্মুক্ত করা যাবে। সকল স্বাক্ষর ডিজিটালি স্ক্যান এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে যাচাইযোগ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তবে ভোটারদের গোপনীয়তা সর্বোচ্চভাবে রক্ষা করা হয়।
শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের সমন্বয়ে ক্যাম্পাসকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। ফলে ৯ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহনের দিনে কোন ধরনের সহিংসতা ঘটেনি। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট গ্রহণের আগের দিন সোমবার রাত ৮টা থেকে টানা ৩৪ ঘণ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রবেশপথ সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো (শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি ক্রসিং, ফুলার রোড, উদয়ন স্কু ল ও নীলক্ষেত) সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন (অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক ও ফায়ার সার্ভিসের যানবাহন) ব্যতীত অন্য কোন যানবাহনকে এসময় ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
ডাকসু নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিএসসিতে অস্থায়ী পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। এই নির্বাচনে ২০৯৬ জন পুলিশ, ডগ স্কোয়াড, সোয়াত টিম, বিশেষায়িত টিম, সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
এছাড়াও ভোটের আগের দিন বিকেলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবার জন্য সবরকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিসিটিভিসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় ৩ স্তরে। আমাদের অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং নিবেদিতপ্রাণ পোলিং কর্মকর্তারা থাকবেন। নির্বাচন কমিশনে এবার চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ১০ জন নির্বাচন কমিশনে আছেন সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা আছে।”
ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা ও ফলাফল
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয় ক্যাম্পাসের ৮টি কেন্দ্রে। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে ভোট গ্রহণ। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ৮টি কেন্দ্রে মোট ৮১০টি বুথ নির্ধারণ করা হয়। ডাকসুতে এবার ভোটার ছিলেন ৩৯,৭৭৫ জন। তাদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ।
বিকাল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হবার পর ৮ ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার মধ্যেই ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাত ৯টা/১০টা নাগাদও যখন ভোট গণনায় তেমন কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছিল না, তখন ঢাবি ক্যাম্পাসসহ দেশজুড়ে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও চাপা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসময় উদয়ন স্কু ল কেন্দ্রের প্রধান অধ্যাপক শামীম রেজা সাংবাদিকদের জানান, প্রযুক্তিগত কারণে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ
দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যুক্ত হয়েছে। এই ব্যাপক অংশগ্রহণ নির্বাচনের বৈধতাকে শক্তিশালী করেছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রশাসনিক দৃঢ়তা, ঐকমত্য গড়ে তোলার কৌশল, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ-- এই চার উপাদানই ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনকে সফল করেছে। তবে এ সাফল্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ এখনো রয়ে গেছে।
ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ প্রশাসনিক দৃঢ়তা, প্রযুক্তির ব্যবহার, সংলাপ এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে পরিকল্পিত উদ্যোগ, স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও পারস্পরিক আস্থা থাকলে যে কোনো নির্বাচনী আয়োজন বিশ্বাসযোগ্য করা সম্ভব। তাই ডাকসু নির্বাচন ভবিষ্যতের অন্যান্য নির্বাচনের জন্যও একটি দিকনির্দেশক উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে, যেখানে গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতাই হবে মূল ভিত্তি।
About the Author
Shahedur Rahman is the Op-Ed-Editor of The Insighta and a media professional with over 17 years of experience in journalism and editing. He can be reached at rahmankazishahedur@gmail.com
Disclaimer: The views expressed in this article are the author's own and do not necessarily reflect The Insighta's editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.