বাংলাদেশে বিজ্ঞান যোগাযোগের ঘাটতি: জনস্বাস্থ্য, জলবায়ু ও জটিল বিষয়ে গুজব রোধে করণীয়
বাংলাদেশে সহজ ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার এখনো গড়ে ওঠেনি। ফলে জনস্বাস্থ্য ও জলবায়ুসহ নানা বিষয়ে গুজব বাড়ছে। এজন্য প্রয়োজন সাধারণের উপযোগী বিজ্ঞানভিত্তিক সচেতনতা, স্থানীয় সম্পৃক্ততা এবং নানামুখী সংলাপ।
When science stays locked in jargon, myths thrive. In Bangladesh, poor science communication limits public understanding of scientific knowledge. This gives rise to misinformation around public health, climate risks, and disaster preparedness. Translating research into plain language that is appropriate to local communities and cultures can increase science-based awareness and help informed decision-making.
বাংলাদেশিরা আবেগপ্রবণ জাতি। এমন অভিযোগ অনেকে করেন। তবে জুলাই মাসে ঢাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা আমাদের আবেগী পরিচয়কেই তুলে ধরেছে।। দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে মানুষের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। এতে মানুষের সহানুভূতি বোঝা গেলেও, আমাদের অসচেতনতার দিকই স্পষ্ট হয়েছে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীরা খুব সহজেই ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন—এমনকি স্বজনদের মাধ্যমেও। কারণ, যখন কারো শরীর পুড়ে যায়, তখন ত্বকের স্বাভাবিক সুরক্ষা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সামান্য স্পর্শ, হাঁচি বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বহন করা জীবাণুও মারাত্মক হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের রোগীরা মারাত্মক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক- প্রতিরোধী জীবাণুতে আক্রান্ত হন। আহতদের দেখতে আসা মানুষের দোষ নয়, বরং দোষ আমাদের—যারা নীতি নির্ধারণ করি, গবেষণা করি, বা বিজ্ঞান শেখাই। কেন বলছি, তা নিয়েই এই লেখা।
আমরা যখনই কোন নতুন আবিষ্কারের ঘটনা শুনি, সেটা নিয়ে পত্রিকার বাইরে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে সেই আবিস্কার সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি পড়তে হয়। কিন্তু এটা অনেকটা নিশ্চিত বলা যায়, অধিকাংশ মানুষ বিশেষত যাঁদের সেই বিষয়ে কোন অভিজ্ঞতা নেই তাদের কাছে গবেষণাপত্রগুলো খুব দুর্বোধ্য, জটিল মনে হয়। লেখক যেন সেগুলো প্রাচীন গ্রীক কিংবা হিব্রু ভাষায় লিখেছেন।
এই অভিজ্ঞতা শুধু বাংলা ভাষাভাষীদেরই বিষয়টা এমন নয়; ইংরেজি যাঁদের প্রধান ভাষা তাদের বেলাতেও এটা প্রযোজ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চশিক্ষিত আমেরিকানদের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও, বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া, হাইপোথিসিস চিহ্নিতকরণ বা প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক ধারণা সম্পর্কে তাদের বোঝাপড়া অনেক ক্ষেত্রে সীমিত। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে গবেষণাপত্রগুলোতে দুর্বোধ্য সব শব্দমালার (Jargon) ব্যবহার। সাধারণ পাঠকরা হয়তো কঠিন শব্দ শুনে মুগ্ধ হন, কিন্তু বুঝতে পারেন কম। এই কম বুঝতে পারাটাই বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যজ্ঞান আদান-প্রদানের ঘাটতিকেই নির্দেশ করে। আর এ ঘাটতিটা দখল করে নেয় অপতথ্য ও গুজব, যা সায়েন্স কমিউনিকেশন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
আমাদের প্রয়োজন বিজ্ঞান নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, যাকে সাধারণ ভাষায় বলা হয় সায়েন্স কমিউনিকেশন। এই কমিউনিকেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জটিল বৈজ্ঞানিক তথ্য সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করা হয়। এর প্রধানতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে বিজ্ঞানের নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে তার চারপাশের জগতকে বুঝতে সাহায্য করা, বিজ্ঞানের প্রতি আস্থা গড়ে তোলা, মানুষকে বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা এবং বিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহার করে ইনফরমড বা তথ্য-নির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্ত নেয়ার উপায়টি উন্নত বিশ্বে “বিজ্ঞান সাক্ষরতা” নামে বেশ জনপ্রিয়।
এই বিজ্ঞান যোগাযোগ বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ । অনলাইন/অফলাইন গুজব রোধে, রোগ বালাইয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা এমনকি ঝড় বৃষ্টি কিংবা বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য আমাদের বিজ্ঞান সাক্ষরতার হার বাড়ানো খুব জরুরী।
বাংলাদেশ একটি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার মতো সমস্যাগুলো নিয়মিতভাবে মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য বেশিরভাগই থাকে ইংরেজিতে লেখা। অর্থ্যাৎ গবেষণা প্রতিবেদনে কিংবা বিদেশি প্রকল্পের রিপোর্টে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যখন এসব তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়, তখন দুর্যোগ মোকাবিলার পূর্বপ্রস্তুতি ও আচরণ পরিবর্তনের সম্ভাবনাও কমে যায়।
একইভাবে, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা সংক্রামক ব্যাধির টিকাদানের মতো বিষয়ে মানুষের ভুল ধারণা নীতিনির্ধারণ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। আমাদের দেশে মেহেরপুর জেলায় নিপাহ ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় ২০০১ সালে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ অর্থাৎ ২৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে, নিপাহ ভাইরাস নিয়ে সচেতনতার অভাব। আমাদের দেশে নিপাহ ভাইরাসে একমাত্র উৎস বাদুড়। বাদুড় রাতে খেজুরের রস খায় এবং তার লালার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস কাঁচা রসে চলে যায়। এরপর মানুষ সেই কাঁচা রস খেয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের লালা থেকে অন্য মানুষে সংক্রমণ হয়। সাধারণ মানুষকে যদি নিপাহ ভাইরাস সংক্রান্ত এই তথ্যগুলো জানানো যেতো, তাহলে এতগুলো মানুষের মৃত্যু এড়ানো যেত। অথচ কোথাও কোথাও আমরা দেখছি উল্টো চিত্র - সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢাকঢোল পিটিয়ে রীতিমতো উৎসব করে রস খাওয়ার আয়োজন করছে অনেকেই।
অবাক বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা পুরোনো ধারণা প্রচলিত আছে যে, “সাধারণ মানুষ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে আগ্রহী নয়, তাদের শুধু সংক্ষিপ্ত তথ্য দিলেই চলবে।” তবে বিজ্ঞানীদের এমন ধারণা সঠিক নয়। গবেষণা জানাচ্ছে মানুষ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বাস, প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ আর পারিবারিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
বাস্তব বিজ্ঞান-যোগাযোগ মানে দুই তরফের সংলাপ: বিজ্ঞানীরা বলবেন, আবার শোনারও সময় দিতে হবে। মানুষকে শ্রোতা না ভেবে অংশীদার ভাবতে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এই অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা আমাদের দেশের শহর ও গ্রামীণ জনপদের মধ্যে রয়েছে তথ্যের নিভর্রযোগ্য সূত্র ও শিক্ষার বিশাল এক বৈষম্য। ঢাকার একজন শিক্ষিত নাগরিক হয়তো ইউটিউবের প্রজনন হেলথ ভিডিও দেখে যে সিদ্ধান্ত নেন, সেই একই বিষয়ে বরিশাল বা রংপুরের একজন নারী তাঁর সিদ্ধান্ত নেন পাশের বাসার চাচির মুখে শোনা গল্পের ভিত্তিতে। এখন প্রশ্ন আসে, কিভাবে বিজ্ঞানকে আমরা শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারি।
আধুনিক বিজ্ঞান-যোগাযোগ গবেষণায় বলা হয়, বিজ্ঞান শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার দুটি ভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে একটি হলো “Dissemination Paradigm”—যেখানে একমুখীভাবে বিজ্ঞানী বা বিশেষজ্ঞরা জনসাধারণকে তথ্য দেন, যেমন টিভি অনুষ্ঠান, ফেসবুক পোস্ট বা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে। সমস্যা হচ্ছে এই পদ্ধতিটি “জ্ঞান ঘাটতি” পূরণের জন্য কার্যকর কিন্তু সব পরিস্থিতিতে নয়। কারণ গবেষণা বলছে, শুধু সঠিক তথ্য দিলেই মানুষ বিশ্বাস করে না, বরং কখনো সেই তথ্য তাদের বিদ্যমান বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে আরও বেশি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অন্য পদ্ধতিটি হলো “Public Participation Paradigm” । এই প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা জনতার সাথে দুই-তরফা সংলাপে যুক্ত হন। এখানে মানুষ শুধু তথ্যই নেয় না, বরং মতামত দেয়, প্রশ্ন তোলে, স্থানীয় জ্ঞান ও নিজেদের অভিজ্ঞতা যুক্ত করে।
যেমন “Citizen Science” প্রকল্পে গ্রামের কৃষক বা সাধারণ মানুষ নিজের এলাকা থেকে জলবায়ু তথ্য পাঠিয়ে গবেষণায় অংশ নিতে পারেন। আবার “Consensus Conference”-এর মতো উদ্যোগে সাধারণ নাগরিকদের দিয়ে নীতিনির্ধারণের আগে বিজ্ঞান-সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর ওপর মতামত নেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে গুরুত্ব বিষয় হচ্ছে কোন্ বার্তা, কোন্ মাধ্যমে, কার মাধ্যমে দিলে কার্যকর হবে তা কৌশলগতভাবে নির্ধারণ করা জরুরী।
সারা দেশে বিজ্ঞান বিষয়ক যোগাযোগ এবং বিজ্ঞান শিক্ষা বাড়াতে কিছু বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
প্রথমত, সব সরকারি বিজ্ঞপ্তি, গবেষণা ও থিসিসে বাংলা ভাষায় সহজ সারাংশ বাধ্যতামূলক করা উচিত এবং এটি হতে হবে একেবারেই সাধারণ বা জনমানুষের বোঝার উপযোগী। গবেষণাপত্রে, ক্লাসে, কনফারেন্সে—আমরা গবেষণার নির্ভুলতাকে যতটা গুরুত্ব দিই, ততটাই গুরুত্ব দিতে হবে ভাষার সরলতা, সংবেদনশীলতা, ও অংশগ্রহণমূলক ব্যাখ্যাকে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি ও উপস্থাপনার প্রশিক্ষণ চালু করা জরুরি। প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখি- যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরোইমিউনোলজি কোর্সে শিক্ষার্থীদের “নিউইয়র্ক টাইমস স্টাইলে” বিজ্ঞান লিখতে শেখানো হয়। প্রতি সপ্তাহে তারা একটি মূল গবেষণাপত্র পড়ে তার একটি সাধারণ মানুষের উপযোগী সারাংশ লেখে। এছাড়াও কৌতূহলকে উৎসাহিত করা, যুক্তিভিত্তিক চিন্তা শেখানো, এবং তথ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে “Sense and Sensibility and Science” কোর্স পড়ানো হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের কোর্স চালু হওয়া উচিত।
দ্বিতীয়ত, প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একটি 'বিজ্ঞান তথ্য কেন্দ্র' গড়ে তোলা উচিত যেখানে সাধারণ মানুষ জলবায়ু, স্বাস্থ্য, কৃষি বা প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয়ে সহজ ভাষায় তথ্য ও সেবা পাবে। একইসাথে একটি জাতীয় বিজ্ঞান-যোগাযোগ নীতি প্রণয়ন করা দরকার যেখানে থাকবে আঞ্চলিক ভাষায় কনটেন্ট তৈরির বাজেট, তথ্য যাচাইয়ের টিম ও সংকটকালে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ব্যবস্থা। মিথ্যা তথ্য ঠেকাতে র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠনও জরুরি। গবেষণায় অনুদানের ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্ততা থাকার অনুচ্ছেদ রাখা যেতে পারে। একটি 'জাতীয় বিজ্ঞান-যোগাযোগ ফেলোশিপ' চালু করা যেতে পারে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মাঠপর্যায়ে গিয়ে নির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক বিষয়কে স্থানীয় প্রেক্ষাপটে অনুবাদ করে জনগণের মধ্যে তুলে ধরবে।
তৃতীয়ত, বিজ্ঞান নিয়ে গুজব প্রতিরোধ করতে গেলে শুধু বিজ্ঞান জানলেই চলবে না—কোন্ বার্তা কোন্ মাধ্যমে, কাদের মাধ্যমে দিলে কার্যকর হবে, সেই কৌশলও জানতে হবে। শুধু তথ্য দিলেই মানুষ বুঝে যাবে এটা ভাবা অবাস্তব। বার্তা, বার্তাবাহক, বা মাধ্যম—কোনটা ঠিক করতে হবে, তা খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে সঠিক তথ্য পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে—মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবার্তা দিলে মানুষ অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। স্কুলশিক্ষক, ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, অথবা গ্রাম্য ডাক্তার—এদের ব্যবহার করে বিজ্ঞানের বার্তা আরও গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করা যায়।
চতুর্থত, মিডিয়া বা গণমাধ্যমের সঙ্গে বিজ্ঞানীদের সম্পর্ক গড়তে হবে। গণমাধ্যমে মাঝেমধ্যে বৈজ্ঞানিক ফলাফলকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে দেখা যায়। এই দূরত্ব কমাতে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সাংবাদিক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে। নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং বা বাংলা প্রেস কিট চালু করা যেতে পারে। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয়ক রিপোর্টার তৈরি করার আলাদা বিট এবং প্রশিক্ষণ চালু করা উচিত যাতে তারা তথ্যভিত্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারে।
বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যেখানে, অসচেতনতা, গুজব (ডিজ-ইনফর্মেশন) এবং ভুল তথ্য (মিস-ইনফর্মেশন) বাতাসের চেয়েও তীব্র গতিতে ছড়ায় —সেখানে বিজ্ঞানকে কেবল গবেষণার বিষয় হিসেবে নয় বরং জনসচেতনতায় রূপান্তরিত করা অত্যন্ত জরুরী। কোভিড মহামারির সময় এই সংকট এতোটা তীব্র ছিল যে শুধু বাংলাদেশ নয়, খোদ আমেরিকাতেই মাস্ক বা টিকার বিষয়ে প্রকৃত তথ্যের অভাবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল। তথ্য প্রযুক্তি যে গতিতে এগুচ্ছে, আর্টফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব বাড়ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য নতুন আবিস্কার। এই সময়ে বিজ্ঞান যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা এখন যেকোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি। মানুষের কাছে তথ্য শুধু পৌঁছে দিলেই চলবে না বরং সেই তথ্য হতে হবে বোধগম্য, কৌতূহল উদ্রেককারী এবং গুজবের বিপরীতে এক সুস্পষ্ট বার্তা। আমরা বিজ্ঞান-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত চাই, তথ্যনির্ভর নীতি চাই, সচেতন নাগরিক চাই—তবে তার আগে চাই এমন একটি বিজ্ঞান-যোগাযোগ ব্যবস্থা, যাতে জনমানুষের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত হবে।
About the Author:
ড. মোঃ আহসানুর রহমান একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও বিজ্ঞানলেখক। ড. রহমান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ের কলেজ অব মেডিসিনে মেটাবলিক ডিজর্ডার ও জিন থেরাপি নিয়ে গবেষণা করেন । বিজ্ঞানের তথ্য সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় তুলে ধরার উদ্দেশ্যে নিয়মিত বিজ্ঞান ও জনসচেতনতা বিষয়ক জটিল বিষয়গুলোকে সাধারনের উপযোগী করে লেখালেখি করেন এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিজ্ঞান-যোগাযোগ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন। লেখকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইমেইল করুন এই ঠিকানায়: ahsan.rahman01@gmail.com
Disclaimer: The views expressed in this article are the author's own and do not necessarily reflect The Insighta's editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.