এত নেতা থাকতে কেন ওসমান হাদীকে টার্গেট করা হলো?
এই লেখায় যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগবিরোধীরা সাংস্কৃতিক শক্তির অভাবে দুর্বল। আর জুলাই অভ্যুত্থানের প্রকৃত সাংস্কৃতিক যোদ্ধা ওসমান হাদী। তার বিকল্প নেই বলেই তিনি প্রধান টার্গেট।
Why was Sharif Osman Hadi targeted first? This article argues that the political battle in Bangladesh is ultimately cultural, and Hadi stood alone as the only leader building a new, mass-rooted cultural force beyond party lines.
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম অগ্র সৈনিক শরিফ ওসমান হাদীকে গুলির ঘটনায় তোলপাড় চলছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। হাদীকে হত্যাচেষ্টার ইস্যুতে নানামুখী বিশ্লেষণ চলছে সর্বত্র। যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি স্কলার ও গ্রাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট শেখ ফরিদ মনে করেন, জুলাইয়ের নেতাদের মধ্যে ওসমান হাদীর কোন বিকল্প নেই। শুধু এজন্যই হাদীকে সবার আগে টার্গেট করা হয়েছে। ঢাকায় ১২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে ওসমান হাদীকে হত্যাচেষ্টার পরদিন ১৩ ডিসেম্বর এক ফেসবুক পোস্টে তিনি এমন অভিমত প্রকাশ করেন। শেখ ফরিদের লেখাটি কিছুটা পরিমার্জন করে ইনসাইটা’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
জুলাইয়ের নেতাদের মধ্যে সবার বিকল্প আছে, কেবল ওসমান হাদী ছাড়া। শুধু এজন্যই হাদীকে সবার আগে টার্গেট করা হয়েছে।
বাংলাদেশে আওয়ামীলীগের বাহিরে যে দল বা গোষ্ঠী, এদের কখনোই কোন কালচারাল শক্তি ছিলো না, নেইও। কাওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যতগুলো ইসলামিক দল আছে তাদের কালচারাল এক্টিভিটিজ বলতে বুঝায় কয়েকটা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির গজল পরিবেশন আর স্টেজ নাটক। এগুলোর সুর পর্যন্ত ভারতীয় গানের নকল। জামাতের কালচারাল শক্তি বলতেও এটাকেই বুঝায়। এর কারণ গানবাজনা, নাচ বা আর্ট এগুলোকে ধর্মের ভিত্তিতে নিরুৎসাহিত করা। যার ফলে এদের কালচার গণমানুষের কালচার না। মানুষ সিনেমা দেখবে, যার কালচারে সিনেমা নেই, তার কালচার একটা নির্দিষ্ট শ্রেণির জন্য। জামাতের যে কয়টা পত্রিকা বা সাময়িকী, সেগুলোও মানসম্মত না।
বিএনপি কোন কালেই এই শ্রেণি শক্তিশালী করতে পারেনি। এর মূল কারণ আদর্শিকভাবে তাদের শক্ত কোন ভেল্যু-বেইজ না থাকা। জাতীয়তাবাদের কথা বললেও সংগতকারণে মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালী জাতীয়তাবাদে ভাটা পড়ে। ৭১ পর্যন্ত বিহারী ও অবাঙালীদের উপস্থিতি ও উর্দুভাষায় কথা বলা লোকজন পাকিস্তান চালানোর ফলে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ যেভাবে সবাইকে একসাথ করতে পেরেছে, ইডিওলজির মত সার্ভ করেছে, বাঙালী জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতার পরে সেভাবে শক্ত হয়ে উঠেনি, প্রতিপক্ষের অভাবে। একই রকমভাবে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ কোন কাল্ট হয়ে উঠেনি।
বিএনপি কয়েকজন নেতা প্রডিউস করেছে--মির্জা ফখরুল, সালাউদ্দিন কাদের, রিজভী। এরা পিউর নেতা--দেশ চালানোর সকল বিদ্যা, বুদ্ধী, দক্ষতা রাখে। বিএনপির বাহিরে কেউ আর এমন নেতা তৈরি করতে পারেনি--এই সময়ে। ৮০ এর পর সালাউদ্দীন আর ফখরুলের মত একজন নেতা খোদ আওয়ামীলীগও বানাতে পারেনি। কিন্তু বিএনপির আদর্শকে সার্ভ করার মত যে কালচারাল শক্তি বা কার্যক্রম, এটা বিএনপির নেই। তাদের ছাত্রসংগঠনের একটা মাসিক পত্রিকাও নেই।
যার ফলে বাংলাদেশের বামপন্থী প্রগতিশীল, কালচারাল ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শক্তিশালী গোষ্ঠির সমর্থন ও সেবা পেয়েছে কেবল আওয়ামীলীগ। এখনো আওয়ামী ন্যারেটিভই ডোমিনেন্ট ন্যারেটিভ।
বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী যে গোষ্ঠী (বাম ও মধ্যমপন্থী) এখন বিএনিপির পক্ষে কাজ করছে, এরা পিউর এন্টি আওয়ামীলীগার না। যার ফলে দেখবেন যেসকল বামপন্থী ও প্রগতিশীল লোকজন এখন বিএনপির পক্ষে কথা বলছে এরা আওয়ামীলীগের প্রতি সফট। আরেকটা প্রগতিশীল শ্রেণি আওয়ামীলীগের দু:শাসনের বিরোধী ছিল, কিন্তু লীগের এভাবে শেষ হওয়া মেনে নিতে পারছে না, এরা এখন পুরোপুরি বিএনপিকে সাপোর্ট দিলেও আওয়ামীলীগের জন্য খুব ক্ষতিকর না। এরা এখনো রিফাইন্ড আওয়ামীলীগ পেলে সেই রিফাইন্ড ভার্সনকেই ভোট দিবে, বিএনপিকে না।
এদের ভিড়ে এন্টি আওয়ামীলীগার, প্রতিষ্ঠিত কালচারের বিপরীতে আদর্শিক অবস্থান নেয়া, মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের (যার মাদ্রাসায় পড়া নিয়ে হীনমন্যতা নেই), প্রগতিশীলদের এক্সিস্টিং প্রথাবিরোধী, আবার ধর্মের সংকীর্ণতার বাহিরে কালচারকে ধারণকারী, গণমানুষের কালচার (নাচ, গান, সিনেমা, নাটক, থিয়েটার) ধারণকারী, ও সমকালীন রাজনৈতিক ধারাকে চ্যালেঞ্জকারী পিউর কারেক্টার হলো শরিফ ওসমান হাদী।
৫ আগস্টের পর সবাই রাজনীতি শুরু করেছে, আর হাদী নতুন সাংস্কৃতিক ধারা শুরু করেছে। জুলাই টিকে রাখার একমাত্র সাংস্কৃতিক যোদ্ধা সে। ফারুকীরা ক্ষমতা থেকে সরলে আর কাজ করবে না। ‘শাহবাগি, গোসল করে না’ বলে গালি দেয়া ১ কোটি কমেন্ট যোদ্ধাদের থেকে ১ জন হাদী অনেক বেশী শক্তিশালী এটা সবাই বুঝতে পারবে না।
হাদীর কোন বিকল্প নেই। হাদীর কোন বিকল্প তৈরি আর হবে না, সংগত কারণেই। হাদী শেষ, একটা যুদ্ধ শেষ। তার বিকল্প নেই। হেরে গেছি আমরা সবাই।
একই ইস্যুতে ১৩ ডিসেম্বর দেয়া আরেকটি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, হাদির যে কালচারাল আন্দোলন সেটা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। ইসলামপন্থী কারো দ্বারা এটা হবে না-- তারা ওয়াজ মাহফিলে গজল গেয়ে বেড়াক। আবার তথাকথিত প্রগতিশীল ভান ধরা কুসুম কুসুম লিবারেলিজম ও সফট ইস্যুতে ট্রিগার্ড হওয়া হালের বড় বড় যুগলবন্দী কলাম লেখা বুদ্ধিজীবীদের দ্বারাও হবে না। হাদির মত পিউর বাংলাদেশী মানুষ লাগবে। যারা দেশের রাজনৈতিক কালচার, প্রাতিষ্ঠানিক কালচার, আর ফ্যাসিবাদের রসদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক আন্দোলন করবে-- সফট কালচারাল ইস্যু ইগনোর করবে।
দুর্ভাগ্য হলো এই আন্দোলন করার মত যোগ্য মানুষ খুবই কম।
About the Author
Shekh Farid is a PhD Scholar and Graduate Research Assistant at the University of Connecticut, Hartford, Connecticut, United States. He can be reached at shekh.farid@uconn.edu
Disclaimer: The views expressed in this article are the author’s own and do not necessarily reflect The Insighta’s editorial stance. However, any errors in the stated facts or figures may be corrected if supported by verifiable evidence.

